আফগানিস্তানে ৭ বছর বয়সী শিশুর বাল্যবিবাহ রোধে তালেবানের ‘রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ’

আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে মাত্র ৭ বছর বয়সী এক শিশুকন্যাকে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিয়ের আয়োজনের ঘটনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে তালেবান সরকার। মেয়েটিকে রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে তারা আটক করেছে শিশুর পিতা ও প্রস্তাবিত বরকে। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে এবং মানবাধিকার রক্ষায় তালেবান সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘ইতিহাস গড়া’ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় সময় ২৭ জুন ২০২৫, আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশের মারজাহ জেলায় একটি নির্মম ঘটনা সামনে আসে—মাত্র সাত বছর বয়সী একটি শিশুকে তার পিতা অর্থের বিনিময়ে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বরকে সম্মতি দেন মেয়েকে শিগগিরই হস্তান্তরের জন্য।

বিষয়টি জানাজানি হলে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা ও সামাজিক অসন্তোষ। এরপরই 'সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়' (Ministry for the Propagation of Virtue and Prevention of Vice) ঘটনার তদন্তে নামে। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মেয়েটির পিতা ও বরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং শরিয়াহ আদালতে হস্তান্তর করা হয় বিচারকার্য সম্পন্নের জন্য।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাওলানা সাইফুল ইসলাম খাইবার হাফিযাহুল্লাহ জানান, মেয়েটি নাবালিকা হওয়ায় কোনোভাবেই তার বিয়ে বৈধ নয়। অতএব, শরিয়াহ অনুযায়ী মেয়েটিকে বরের কাছে হস্তান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং এটি স্পষ্টতই একটি অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মেয়েটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে।

এই ঘটনায় আফগানিস্তানে ও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলো তালেবান সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং অধিকারকর্মীরা বলছেন, "তালেবান সরকার যেখানে সবসময় সমালোচিত, সেখানে এই পদক্ষেপ সত্যিই একটি সাহসী দৃষ্টান্ত।"

বিশ্বজুড়ে যখন বাল্যবিবাহ, নারী অধিকার লঙ্ঘন, ও ধর্মীয় উগ্রতার জন্য আফগান সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, ঠিক তখনই তারা একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—শিশুদের রক্ষা করতে তারা প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি isolated incident নয়—বরং তালেবান প্রশাসনের ভেতরে ধীরে ধীরে একটি মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারের সম্ভাবনার ইঙ্গিত হতে পারে। যদিও আরও অনেক পথ বাকি, এই পদক্ষেপ আফগান নারীদের জন্য একটি আশার সঞ্চার করেছে।

একটি মাত্র ৭ বছরের শিশুর জীবনের সুরক্ষায় নেওয়া এই পদক্ষেপ একটি সমাজে কতখানি ন্যায়বিচার ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে পারে—তা দেখিয়ে দিল তালেবান সরকার। এ ঘটনা শুধু একটি বিবাহ বন্ধ করেই থেমে যায়নি; বরং এটি একটি ঐতিহাসিক বার্তা দিয়েছে—বাল্যবিবাহ বরদাশত নয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন